নিফাক

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আকাইদ | | NCTB BOOK

পরিচয়
নিফাক শব্দের অর্থ ভণ্ডামি, কপটতা, প্রতারণা, দ্বিমুখী নীতি ইত্যাদি । ইসলামি পরিভাষায় মুখে ইমানের স্বীকার ও অন্তরে অবিশ্বাস করাকে নিফাক বলা হয়। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। মুনাফিকরা সাধারণত সামাজিক ও পার্থিব লাভের জন্য এরূপ করে থাকে। তারা মুসলমান ও কাফির উভয় দলের সাথেই থাকে । প্রকাশ্যে তারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে । কিন্তু গোপনে তারা ইসলামকে অস্বীকার করে । তাদের অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

অর্থ: “যখন তারা (মুনাফিকরা) ইমানদারদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি । আর যখন তারা গোপনে তাদের শয়তানদের সাথে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা শুধু তাদের সাথে ঠাট্টা-তামাশা করে থাকি ।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৪)

এক কথায় অন্তরে কুফর রেখে মুখে মুখে ইমানের কথা প্রকাশকে নিফাক বলে। আর এরূপ প্রকাশকারী হলো মুনাফিক।

মুনাফিকদের চরিত্র
নিফাক হলো নৈতিকতা ও মানবিকতার আদর্শের বিপরীত কাজ । মুনাফিকদের চরিত্র দেখলে আমরা এ সত্য জানতে পাই । তারা সব ধরনের অন্যায় ও মন্দ কাজ করে থাকে । উত্তম আচরণ ও উত্তম চরিত্র তারা কখনোই অনুশীলন করে না । বরং মিথ্যা ও প্রতারণাই তাদের প্রধান কাজ । আল্লাহ পাক বলেন-

অর্থ : “আর আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, মুনাফিকরা নিশ্চয়ই মিথ্যাবাদী ।” (সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত ১)

রাসুলুল্লাহ (স.) বহু হাদিসে মুনাফিকদের চরিত্র বর্ণনা করেছেন । একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

অর্থ : “মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি । যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোনো কিছু গচ্ছিত রাখা হয় তখন তার খিয়ানত করে ।” (সহিহ্ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম)

 

নিফাকের কুফল ও পরিণতি
নিফাক জঘন্যতম পাপ । এটা মানুষের চরিত্র ধ্বংস করে ফেলে । নিফাকের ফলে মানুষ অন্যায় ও অশ্লীল কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়। নিফাকের দ্বারা মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি হয় । ফলে মানব সমাজে মারামারি, হানাহানি ও অশান্তির সৃষ্টি হয়। মুনাফিকরা ইসলামের চরম শত্রু । এরা বাইরে মুসলমান বলে দাবি করে । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা কাফিরদেরপক্ষে কাজ করে । 

এদের গোপন শত্রুতা মুসলমানদের বিপদে ফেলে। এ শত্রুরা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে । ইসলাম ও মুসলমানদের গোপন কথা ও দুর্বলতা প্রকাশ করে দেয়। এরা মুসলমানদের মধ্যে মতানৈক্য ও মারামারি সৃষ্টির চেষ্টা করে । প্রকাশ্য শত্রুর তুলনায় গোপন শত্রু বেশি ক্ষতিকর । কেননা প্রকাশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা যায়। কিন্তু যে গোপনে শত্রুতা করে তাকে চেনা যায় না । তার ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য আত্মরক্ষা করারও সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে সে
বন্ধু বেশে সহজেই বড় ক্ষতিসাধন করতে পারে । এসব কারণে দুনিয়াতে মুনাফিকরা ঘৃণিত ও নিন্দিত হয় । আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠোর আযাব । আল্লাহ তায়ালা বলেন-

অর্থ : “নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে ।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১৪৫) 

আমরা সকলেই নিফাক থেকে বেঁচে থাকব। হাদিসে যেসব কাজ মুনাফিকের নিদর্শন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে আমরা সেগুলো বর্জন করব। খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবনযাপনের চেষ্টা করব।

নিফাক পরিহারের উপায়
১. কথা বলার সময় সত্য কথা বলবে, মিথ্যা কথা বলবে না।
২. কাউকে কথা দিলে তা রক্ষা করবে।
৩. আমানত রক্ষা করবে। যেমন কারো কাছে কোনো জিনিস ও সম্পদ আমানত রাখলে তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবে এবং ফেরত দিবে । কারো সাথে কথা দিলে তা রক্ষা করবে । এছাড়াও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করবে না।

কাজ : শিক্ষার্থীরা-
       ক. দলে বিভক্ত হয়ে মুনাফিকের নিদর্শনগুলো লিখে একটি পোস্টার তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
       খ. নিফাকের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে ১০টি বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে ।
Content added By
Promotion